কিভাবে চাকরিপ্রার্থী হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা উচিত?

কিভাবে চাকরিপ্রার্থী হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা উচিত? How to develop yourself as a job seeker?

কয়েক বছর পূর্বের তুলনায় বর্তমানে চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা অনেকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। চাকরির বাজারে নিজেকে উপযোগী করে তোলার জন্য অবশ্যই বেশ কিছু টিপস অবলম্বন করা দরকার। এই আর্টিকেলে কিভাবে নিজেকে চাকরির উপযোগী করে তুলবেন সে সম্পর্কে আলোচনা করব। শেষ পর্যন্ত পড়লে সহজেই বিস্তারিত বুঝতে পারবেন।

কিভাবে চাকরিপ্রার্থী হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা উচিত? How to develop yourself as a job seeker?

কিভাবে চাকরির পড়াশোনা করতে হয় অথবা দিনে কযত ঘন্টা পড়াশুনা করলে চাকরি পাওয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা করছি না। চাকরি পাওয়ার জন্য নিজের মানসিকতা কিরকম থাকা উচিৎ, ইন্টারভিউ চলাকালীন সমযয়ের আচার-আচরণ, কি রকম কথা বলার ধরন হওয়া উচিৎ সে সম্পর্কে আজকে আলোচনা করবো।

কিভাবে চাকরিপ্রার্থী হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা উচিত?

চাকরি পাওয়ার প্রথম শর্ত হল চাকরির জন্য পড়াশোনা করা। সকল ক্ষেত্রে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করলেই চাকরি নিশ্চিত এরকমটা বলা ভুল। কারন অধিকাংশ চাকরিতেই পরীক্ষার সাথে সাথে ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমেও নিয়োগ দেওয়া হয়। ইন্টারভিউ সম্পর্কিত বেশ কিছু বিষয় আছে যা পালন করলে সহজেই নিজেকে যে কোনো চাকরি পাওয়ার জন্য উপযোগী করে তুলতে পারবেন।

ইন্টারভিউ দেওয়ার আগে চাকরির জন্য নিজেকে যোগ্য করে তোলার লক্ষ্যে অবশ্যই নিচের বিষয়গুলো ফলো করতে হবে।

১. বডি ল্যাঙ্গুয়েজঃ

যে কোনো ধরনের চাকরির ইন্টারভিউ চলাকালীন সময় বিশেষভাবে চাকরিপ্রার্থীর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ লক্ষ্য করা হয়। সুতরাং ইন্টারভিউয়ের সময় এমন কোনো ধরনের অঙ্গভঙ্গি করা যাবে না যাতে নিয়োগকর্তার মনে আপনার সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়। নিয়োগকর্তার চোখে চোখ রেখে সোজা ভাবে বসে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এর মাধ্যমে নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে হবে। যাতে নিয়োগকর্তা খুব সহজেই বুঝতে পারে যে, আপনি তাদের ওই কাজের জন্য একদম পারফেক্ট এবং আপনাকে সুযোগ দিলে ওই কাজটি আপনি দায়িত্ব সহকারে পালন করতে পারবেন।

২. সিভি/বায়োডাটা/রিজিউমে নিজের বিশেষত্ব তুলে ধরুনঃ

কোন চাকরির জন্য আপনি আবেদন করতে চাইছেন সেই নিরিখে নিজের বা সিভি বা বায়োডাটা তৈরি করুন। যদি কোন ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত কাজের যদি অভিজ্ঞতা থাকে সেটি অবশ্যই সিভিতে যুক্ত করতে ভুলবেন না। সুতরাং সব থেকে ভালো হয় যদি আপনি যেই চাকরির জন্য আবেদন করছেন সেই চাকরিটি সম্পর্কে আগে থেকে যতটুক সম্ভব জেনে নিয়ে তার ভিত্তিতে আপনার সিভি বা বায়োডাট তৈরি করবেন।

৩. আকর্ষণীয় কভার লেটারঃ

বায়োডাটার মতই কভার লেটারও অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে কভার লেটার এবং বায়োডাটার মধ্যে পার্থক্য থাকবে। এই দুটোকে কোনভাবেই এক রকম করা যাবে না। কভার লেটারে নিজের যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ত বিবরণ থাকবে। সেইসাথে ওই প্রতিষ্ঠানের কার্য পদ্ধতি কেন আপনার পছন্দ এবং আপনি কেন ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে চান তা উল্লেখ করবেন। এতে নিয়োগকর্তারা আপনার প্রতি আকৃষ্ট হবেন। কভার লেটার লেখার নিয়মাবলী সম্পকে জানতে গুগলে সার্চ করে দেখতে পারেন।

৪. নম্রতা, ভদ্রতা বজায় রাখুনঃ

নম্রতা এবং ভদ্রতা আপনি জোর করে উপস্থাপন করতে পারেন না। এটা সহজাত বৈশিষ্ঠ হতে পারে আবার অনুশীলনের মাধ্যমেও অর্জন করা সম্ভব। সুতরাং ইন্টারভিউ চলাকালীন সর্বদা মুখে হালকা হাসি রেখে প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। আপনি যদি প্রশ্নকর্তাদের কোনো প্রশ্ন করেন এবং তার উত্তর পেয়ে যান তাহলে অবশ্যই তাদেরকে ধন্যবাদ দিবেন। সেই সাথে আপনি যে পদের জন্য আবেদন করেছেন সেই চাকরিটি করার জন্য আপনি কতটা উৎসাহিত সেটা আপনি তাদেরকে বোঝাতে পারলে অন্যদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে থাকবেন।

৫. প্রশ্নকর্তাকে প্রশ্ন করুনঃ

ইন্টারভিউ চলাকালীন সময় প্রশ্নকর্তাকে প্রশ্ন করার বিষয়টা কিছুটা অদ্ভুত মনে হচ্ছে তাই না? কিন্তু নিজের কৌতুহল বশত কোন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আপনার বেশ কিছু প্রশ্ন থাকতেই পারে। এটা আসলে অবাক করার মত কোন বিষয় না। সুতরাং ওই নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত বেশ কিছু, বিশেষ করে তিন থেকে পাঁচটি প্রশ্ন আপনি আগে থেকেই ঠিক করে রাখবেন। আর এই প্রশ্নের মধ্যে দিয়েই প্রশ্নকর্তারা আপনার কাজের আগ্রহ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাবে। যার ফলে আপনি আপনার অন্য প্রতিযোগীদের পিছনে ফেলে দেবেন।

৬. অনলাইনে ইন্টারভিউ হলে করনীয়ঃ

আজকাল অনলাইন ইন্টারভিউ নেওয়ার বিষয়টা খুবই স্বাভাবিক। যেকোনো নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইন্টারভিউ এর আয়োজন করতে পারে অনলাইনের মাধ্যমে। সেক্ষেত্রে আপনি আগে থেকেই আপনার ইন্টারনেট কানেকশন ঠিক আছে কিনা তা চেক করে নিবেন। কম্পিউটার বা মোবাইলের ক্যামেরা, মাইক্রোফোন এগুলো ঠিক আছে কিনা তা চেক করে দেখবেন। আপনি যেই রুমে বসে ইন্টারভিউ দেবেন সেখানে পর্যাপ্ত পরিমান আলো থাকা দরকার। যাতে নিয়োগকর্তারা আপনার ফেইস ভালো করে দেখতে পারে। সেই সাথে আপনার চারপাশ যেন কোলাহলমুক্ত অর্থাৎ কোন ধরনের চিৎকার চেচামেচি না হয় সেটার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

৭. ইন্টারভিউ দেওয়া প্র্যাকটিস করুনঃ

‘Practice Makes Perfect’ বলে একটি প্রবাদ আছে। অর্থাৎ আমরা বলতে পারি প্র্যাকটিস আমাদের নির্ভুল করে তোলে। সুতরাং আপনি যে ধরনের চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিবেন, সেই প্রস্তুতিতে ইন্টারভিউ দেওয়ার আগাম প্রস্তুতিও থাকা জরুরী। এজন্য আপনি মক ইন্টারভিউতে অংশগ্রহণ করতে পারেন। এছাড়াও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে কিংবা পরিবারের লোকজনর সাথে ইন্টারভিউয়ের প্র্যাকটিস করতে পারেন।

চাকরির ইন্টারভিউতে করা কমন কিছু প্রশ্নঃ

প্রশ্ন ১. আপনার পরিচয় দিন।

প্রশ্ন ২. আপনি কাজটির সঙ্গে কেন যুক্ত হতে চান?

প্রশ্ন ৩. আপনার নিজের দুর্বলতা কি?

প্রশ্ন ৪. আপনার এই কাজটি সম্পর্কে ধারণা কি?

প্রশ্ন ৫.কেন আপনাকে আমরা চাকরিটি দেব?

প্রশ্ন ৬. আপনার এই কাজ সম্পর্কে কী পূর্বের কোনো অভিজ্ঞতা আছে?

এই প্রশ্নগুলো ছাড়াও আরো অনেক প্রশ্ন ইন্টারভিউতে করা হয়ে থাকে। এমন কিছু প্রশ্ন থাকে যেগুলো আপনার উপস্থিত বুদ্ধি যাচাই করার জন্য করা হয়। আর এই সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়ার জন্য অবশ্যই আপনার ইন্টারভিউ এর প্র্যাকটিস করা দরকার।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url